Saturday, October 28, 2006

কতগুলো লাশ এবং আমাদের রাজনীতি

বরাবর যে বিষয়টির প্রতি আমার চরম অনাগ্রহ, দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমি সেই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেছি। বিষয়টি হলো রাজনীতি, আর বাস্তবতা হলো রাজনীতি বিজ্ঞানে আমি মাষ্টার্স করেছি। সে প্রসঙ্গ থাকুক। আমার অনাগ্রহের বিষয়টিতে আসি। আমার চাচাতো ভাই যিনি একজন তুখোড় ছাত্র ছিলেন আর যার ছিল মানুষকে ভালোবাসবার প্রচন্ড ক্ষমতা। ফলে আমাদের কাছে তো তিনি প্রিয় ছিলেনই, আমাদের চারপাশে যারা রয়েছিলেন তাদের সবার কাছে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। সালটা ঠিক মনে নেই তবে পচাত্তর ছেয়াত্তরের দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং যথারীতি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলাফল যা হবার তাই হলো দীর্ঘ আট বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরুলেন এবং রাজনীতি নিয়ে এতটাই মেতে থাকলেন যে, মেঘে মেঘে বেলা যে শেষ হয়ে এসেছে টেরই পেলেন না। আজ তিনি নিতান্তই অসহায় একজন মানুষ। যার নিজস্ব কোনও কাজ নেই, নেই স্বাভাবিক জীবন যাপনের সামান্যতম অবস্থানটুকুও। রাজনীতি অনেককে অনেক কিছু দিলেও আমার প্রিয় একজন মানুষকে এভাবে নি:স্ব করে দেয়ায় এই বিষয়টির প্রতি কেমন যেন এক ধরনের সহজাত অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়ে যায়, যা আজ অব্দি রয়ে গেছে। রাজনীতির প্রতি আমার অনাগ্রহের এই বড় কারনটা ছাড়াও আরো একটি কারন রয়েছে পরে নাহয় একিদন লিখব। তখন থেকেই রাজনৈতিক কোন আলোচনা আমার বিরক্তির একটা প্রধান কারন হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু শত চেষ্ঠা করেও যে মাটিতে আমার জন্ম তার অসম্মান দেখলে চাপা প্রতিবাদটা আটকাতে পারিনা, যেজন্য আজকের এই লেখা।
কদিন ধরে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাকে কেমন যেন ভাবিয়ে তুলেছে। আমি জানি, গনতন্ত্র বোকাদের শাসন কিন্তু তারপরেও বর্তমান বিশ্বে গনতন্ত্রই একমাত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে যা অন্যকোন মতবাদ পারেনি। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পরে দেরিতে হলেও গনতন্ত্রের চর্চা শুরু হয়েছে। গনতন্ত্রের চর্চা শুরুর দিকে আমার ভিতরে একধরনের নেতিবাচক অনুভুতি কাজ করতো। কিন্তু নিজেকে প্রবোধ দিতাম এই বলে যে, গনতন্ত্রতো চর্চার বিষয়। নিরবিচ্ছিন্ন চর্চা করলে একদিন ঠিকই পরিশুদ্ধ গনতন্ত্র এদেশে প্রতিষ্ঠিত হবেই। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, গনতন্ত্রের বয়স যত বাড়ছে আমার ভিতরের নৈরাশ্যের বোধটা ততই প্রকট হচ্ছে। বেশ কিছুদিন থেকেই বিরোধীদল দাবী করে আসছিল যে তারা কে এম হাসানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানবে না, তাদের দাবী যে হাসান বি এন পি'র দলীয় লোক। এরকম পরিস্থিতিতে দুই দলের সাধারন সম্পাদক পর্যায়ে ম্যালা ক্যাচালে ভরপুর সংলাপও হলো, কাজের কাজ কিছুই হলো না। কোন সুরাহা ছাড়াই সংলাপ ভেঙ্গে গেল। বি এন পি ঘোষণা দিল কে এম হাসান প্রসঙ্গ ছাড়া আলোচনা হতে পারে আওয়ামীলীগ ঘোষণা করলো কে এম হাসানকে সরকারপ্রধান করা হলে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী দেয়া হবে, সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে। এরকম সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সাতাশ তারিখের রাতটা আতংকে কাটলো। আর আজ সকাল থেকে শুরু হলো মাঠ দখলের লড়াই। এই লেখাটি লেখা পর্যন্ত সংঘাতে মোট দশজন প্রান দিয়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, আহত হওয়ার ঘটনা ঘেটেছে প্রতিটি জেলায় এবং অধিকাংশ উপজেলায়। এত খারাপ সংবাদের মাঝেই 'মজার' একটি ঘটনা ঘটেছে, ঘটনাটি হচ্ছে, সন্ধ্যায় কে এম হাসান প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে কি হাসান সাহেব আমাদের রাজনৈতিক সহিস্ঞুতার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন? নাকি তিনি ভাবছিলেন, "দেখি লায়লা কেয়া কারেগা"

No comments:

Post a Comment