Tuesday, November 07, 2006

গরুর গাড়ীতে চড়েছে উত্তরের সংস্কৃতি -১

"ও কি গাড়ীয়াল ভাই, হাকাও গাড়ী তুই................" এই ভাওয়াইয়া গানটি শোনেন নি এমন বাংলাদেশী খুজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হলেও নির্মম বাস্তবতা হলো উত্তরাঞ্চল থেকে এই গরুর গাড়ী আর 'ভাওয়াইয়া গান' দুটোই হারিয়ে যেতে বসেছে।
ভাওয়াইয়া গান হল উত্তরাঞ্চলের নিজের গান, মাটির গন্ধ থেকে উঠে আসা প্রানের গান। দু'একজন শিক্ষিত গীতিকার কিছু গান রচনা করলেও অধিকাংশ গানই রচিত হয়েছে নিতান্তই স্বল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত মানুষের দ্বারা। একজন অশিক্ষিত মানুষ আর যাই পারুক, কৃত্রিমতার আশ্রয় নিতে পারে না, ফলে এই ভাওয়াইয়া গানগুলোতে সাধারন মানুষের অকৃত্রিম আবেগ, কৃত্রিমতা বিবর্জিত অনুভুতির সরল বহি:প্রকাশ ভাওয়াইয়া গানকে দিয়েছে পুরোপুরি অন্য এক মাত্রা। আজ থেকে দশ বারো বছর আগেও রেডিও বাংলাদেশ রংপুর কেন্দ্র থেকে বিকেল সাড়ে চারটায় ভাওয়াইয়া গানের যে অনুষ্ঠানটি হতো তা শোনার জন্য যে বাড়ীতে রেডিও ছিল সে বাড়ীর সবাই তো বটে বরং আশপাশের বাড়ী থেকেও নারী পুরুষ নির্বিশেষে জমা হতো রেডিও সেটের সামনে ভাওয়াইয়া গান শোনার জন্য। অথচ এই ক'বছরের মধ্যেই দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে গেছে। আজ আর গ্রামের লোকেরাও খুব একটা খবর রাখেনা- ভাওয়াইয়া গানের অনুষ্ঠান কখন হয়? ভাওয়াইয়া সংস্কৃতির এই পট পরিবর্তনে ইদানীং আমার মধ্যে এক ধরনের শংকা কাজ করে, তবে কী মানুষের অনুভুতি, আবেগ দিন দিন ভোতা হয়ে যাচ্ছে? নাকি এখন যে গানগুলো লেখা হচ্ছে, সুর করা হচ্ছে সেগুলোই আবেগহীন, আবেদনহীন ফলে মানুষের প্রান ছুয়ে যাচ্ছে না। আমি গবেষক নই তাই নিশ্চিত বলতে পারছি না হাজার বছরের লালিত আমাদের এই নিজস্ব গৌরবময় সংস্কৃতি কেন আজ হারাতে বসেছে। তবে এটি বলতে পারি অর্ধমৃত এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে গবেষনার পাশাপাশি সকল শ্রেনীর মানুষের পৃষ্টপোষকতা আজ একান্ত প্রয়োজন। নাহলে ট্রাক, বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে উত্তরাঞ্চলের আর এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গরুরগাড়ী যেমন কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে তেমনি হারিয়ে যাবে প্রানের গান ভাওয়াইয়া। হয়তোবা একিদন পৃথিবীর কোন মিউজিয়ামেই এদের অস্তিত্ত্ব খুজে পাওয়া যাবে না।