Saturday, November 04, 2006

কী সর্বনাশের কথা, "বড়ই আনন্দে আছি!"

চারিদিকের ভাবসাব মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে, রোম পুড়ছে আর নিরো বাশি বাজাচ্ছে। বাজাবেই তো রোম পুরে গেলে নিরোর তো কিছু এসে যায় না যাদের এসে যায় দুর্ভাগ্য হলো আগুন নেভনোর তাদের কোন ক্ষমতাই নেই।
বলছিলাম আমাদের মত আম জনতার কথা। আজ গ্রামের বাড়ী থেকে আসা আমার এক প্রতিবেশিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "ভাই, দেশের হালচালটা বলেন তো একটু শুনি।" উত্তরটা শুনে কেমন যেন নিজেকেই অচেনা লাগলো। তিনি বললেন, ক্যান দ্যাশে আবার কী হইছে? বড়ই সত্য কথা। আসলেও তো দেশের কিচ্ছু হয়নি। সব আগের মতোই আছে। গাড়ী ঘোড়া যা চলার চলছে, যে যাকে যতটুকু ঠকাতে পারে ঠকাচ্ছে, যে যতটুকু শোষণ করতে পারে করছে, নৈতিকতার বাছ-বিচার না করে যে যেভাবে পারে চুরি চামারী করেই যাচ্ছে, হুদাহুদি কিছু মাথাওয়ালা মানুষ, আর রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশ গেল, দেশ গেল বলে বৃথা কান্নাকাটি করছে।
কী রাষ্ট্রীয়, কী সামাজিক, কী ব্যক্তিগত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই চুড়ান্ত অনিয়ম, চুড়ান্ত অবক্ষয় অথচ কত অবলীলায় দেশ চলছে। খুব বড় কোন ক্ষতি হচ্ছে না কারোরই। এইসব অনিয়ম, নৈতিকতার এই চুড়ান্ত অবক্ষয় এ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় তাহলে কী? নাকি এভাবেই চলবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব যারা কাধে নেন তারা কী কখনো বিষয়টি ভেবেছেন? মনে হয় না। বিশেষত নৈতিকতার অবক্ষয় থেকে আমাদেরকে মুক্ত করবেন কে?
গতকাল এবং আজকের প্রথম আলোর দুটো খবরের দিকে তাকান। কী নির্মম নৈতিকতার অবক্ষয় এ জাতির হয়েছে বুঝতে পারবেন। গতকাল চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়ের ১০০০গজ বৈদ্যুতিক তার কারা যেন চুরি করে নিয়ে গেছে, আর আজকের কাগজে এসেছে গতকাল মধ্যরাতে কিছু দুবৃত্ত কারমাইকেল কলেজের ছাত্রীদের হোষ্টেলে দেয়াল টপকে ভতরে ঢোকার সময় ছাত্রীদের হাতে একজন দুর্বৃত্ত ধরা পড়েছে । দুটো ঘটনার মধ্যে অনেকগুলো সাদৃশ্যের মধ্যে চোখে পড়ার মতো সাদৃশ্য হলো নৈতিকতার অবক্ষয়। নিতান্ত হিতাহিত জ্ঞানশুন্য দুদল মানুষ ঘটনা দুটো ঘটিয়েছে। আমার একটি অপকর্ম দ্বারা একজন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নাকি অনেকগুলো মানূষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এই বোধটুকু মানুষ কখন হারিয়ে ফেলে। উত্তর সহজ, একমাত্র নৈতিকতার অবক্ষয় হলেই মানুষ সহজ এই বোধটুকু হারিয়ে ফেলে। সামাজিক বা ধর্মীয় শিক্ষা যখন মানুষকে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য শেখাতে ব্যর্থ হয় নৈতিকতার অবক্ষয় হয় তখনই।
চুড়ান্ত বাস্তবতা হলো আমরা এই সহজাত শিক্ষা থেকে কিছুই শিখছি না। আমাদেরকে নৈতিকতা উন্নয়নের এই শিক্ষায় কারা শিক্ষিত করে তুলবেন? শিক্ষাগ্রহনের এই জীবনব্যাপী প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে বাবা-মা, পরিবার, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষক এবং অবশ্যম্ভাবীরুপে রাজনৈতিক নেতারা। আরও মজার ব্যাপার হলো, বাবা-মা, পরিবার বা শিক্ষকগন একজন মানুষকে অন্যান্য শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলেও নৈতিকতা শিক্ষার এই গুরুত্বপুর্ণ স্তরটিতে রাজনৈতিক নেতারাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কেননা নৈতিকতা শিক্ষার উল্লেখযোগ্য সময় হল যৌবন। আর এ সময়ে যুবকেরা অবশ্যই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তাহলে ব্যাপরটি দাড়ালো নৈতিকতার শিক্ষায় রাজনৈতিক দলের ভূমিকাই সবচে' বেশী। আর আমাদের এই নৈতিক অবক্ষয়ের দায়ভার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না। আরও জোর দিয়ে বললে বলা যায় আমাদের এই নৈতিক অবক্ষয়ে প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দায়ী, হয় তারা আমাদেরকে শিক্ষিত করতে পারছেন না, নতুবা তাঁরা নিজেরাই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন। ছোটমুখে বড় কথা বলে ফেললাম, দয়া করে মাফ করে দেবেন।
তবুও জিব্রাইলের ঘোড়ায় চড়ে দেশ নির্বিঘ্নে শা-শা করে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা বড়ই আনন্দে আছি, কেমন করে বলুনতো? একটা গল্প শুনুন, উত্তরটা পেয়ে যাবেন- এক নাস্তিক গোটা পৃথিবী ঘুরে ক্লান্ত হয়ে বাংলাদেশে এসে কিছুদিন থাকলেন এবং সবাইকে চমকে দিয়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। লোকজন বলাবলি শুরু করলো, কী আশ্চর্য! লোকটি গোটা পৃথিবী ঘুরলেন কিন্তু কোথাও কোন ধর্ম গ্রহন করলেন না আর এদেশে এসে মুসলমান হয়ে গেলেন! এদের মধ্যে অতি উত্সাহী একজন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ভাই, আপনি হঠাত্ মুসলমান হলেন কেন বলুনতো? তিনি বললেন, "ভাই আমি পৃথিবীর যতগুলো দেশে ঘুরেছি প্রতিটি দেশেই আইন কানুন রয়েছে তা দিয়ে দেশ চলে আর এদেশে আইন কানুন কিছুই নেই অথচ দিব্যি দেশ চলছে। আল্লাহ ছাড়া কে চালাচ্ছে বলুন? তাই মুসলমান হয়ে গেলাম।"

No comments:

Post a Comment