Thursday, March 27, 2008

আর একটা স্বাধীনতা দিবস!

ভীষন নির্বিঘ্নে আর একটা স্বাধীনতা দিবস কেটে গেল! নির্বিঘ্নে কাটবার কথা ছিল না, কথা ছিল ব্যাপক উদ্দীপনায় এ দিনটি কাটবে। আমরা সবাই মিলে এখানকার একটি নি:স্ব মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আমাদের ব্যাক্তিগত উদ্দোগে তোলা চাদার টাকা দিয়ে পূণ:র্বাসনের একটা চেষ্টা করবো আর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যতটা সম্ভব একদিনের জন্যে হলেও বিশেষ সম্মান দেব।

বিপত্তিটা বাধলো এখানেই। মুক্তিযোদ্ধা খোজার প্রাথমিক প্রচেষ্টাতেই একটা বড় হোচট খেয়ে গেলাম। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা রাষ্ট্রস্বীকৃত সত্যিকার অর্থে তাদের অনেকেরই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করার নৈতিক অধিকারটুকুও নেই। আর যারা সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা তাদের অনেকেরই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। এমনি এক মুক্তিযোদ্ধার চুরি যাওয়া একটি জীর্ণ ট্রাংক উদ্ধার করা হয়েছিল কিছুদিন আগে। চোর ট্রাংকের অন্যান্য জিনিসপত্র নিলেও ট্রাংকের ভিতরে এম এ জি ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদপত্রসহ ট্রাংকটি রেখে যায়। অনেক খুজে আমরা উপস্থিত হই সেই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীতে। বাড়ী বলতে একটি মাত্র ছনের দোচালা ঘর, আর তিনি নিজে দিনমজুরী করে তিন সন্তানের পরিবারটিকে কোনমতে টেনে হিচরে নিচ্ছেন অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে।

তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার কী কোন স্বীকৃতি আছে? তিনি শিশুর মত ডুকরে কেদে উঠলেন, 'ছিল বাবা, চোরে নিয়ে গেছে।'
আর কোন স্বীকৃতি?
স্বীকৃতি আর কে দেবে বাবা? যিনি দেবার তিনি তো দিয়েছেন।
বিষাদের মেঘে আধার হয়ে এল মনের আকাশ। যিনি নিজের জীবন বাজী ধরেছিলেন একটি সবুজ মৃত্তিকার জন্য এই জাতি তাকে স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। নিজের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে বাড়ী ফিরলাম।

স্বাধীনতা দিবস পেরিয়ে গেল। জমানো চাদার টাকাটা কাউকে দেয়া হয়নি। অপরাধবোধ আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। পূণ:র্বাসনের নামে আমরা কী একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আরও অপমানিত করছি। যে অপমানের গ্লানি তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন তা কী যথেষ্ট নয়?